স্কুলছাত্রের শহীদ মিনার ভাঙার ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল
আপলোড সময় :
২২-০২-২০২৫ ০৮:৪৯:২০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২২-০২-২০২৫ ০৮:৪৯:২০ অপরাহ্ন
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে একজন স্কুলছাত্র শহীদ মিনার ভাঙছে। ওই ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ‘ইউনুস সাহেব আপনি পারছেন, একটা গোটা প্রজন্মকে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ধ্বংস করার জন্য।’
এছাড়া, ওই ভিডিওসহ আরো কিছু পোস্ট নেতিবাচকভাবে করা হয়েছে যেখানে শহীদ মিনার ভাঙার আসল কারণের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে ইতিহাস ঐতিহ্য ধ্বংস করার পরিপ্রেক্ষিতে ওই শহীদ মিনার ভাঙা হচ্ছে।
‘অমর ২১-এর শহীদ মিনার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা’ শীর্ষক দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমেও ওই ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার জানায়, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার ভাঙচুরের ভাইরাল ভিডিওটি কোনো বিদ্বেষমূলক সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের অংশ নয়। বিদ্যালয়টিতে নতুন করে বড় একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করায় প্রধান শিক্ষকের অনুমতি সাপেক্ষে পুরাতন ছোট শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলা হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে Sabbir3_90 নামক একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আলোচিত ঘটনাটির আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়।
ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘পাশে নতুন শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে এজন্য পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হচ্ছে।’ ওই ভিডিওতে পাশে আরেকটি শহীদ মিনারও দেখা যায়।
ওই টিকটক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে একই বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থীর টিকটক আইডি খুঁজে পাওয়া যায়।
ওই শিক্ষার্থীর টিকটক আইডি পর্যবেক্ষণ করে গত ২১শে ফেব্রুয়ারি পোস্টকৃত একটি ভিডিওতে ২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ব্যানারসহ শিক্ষার্থীদের স্লোগানের একটি দৃশ্য পাওয়া যায়। ওই ব্যানারে বিদ্যালয়ের নামের উল্লেখ পাওয়া যায় এবং জানা যায় যে বিদ্যালয়টির নাম হলো ‘টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়’।
উল্লেখ্য যে, ওই টিকটক অ্যাকাউন্টে শহীদ মিনার ভাঙার একটি দৃশ্যও প্রচার করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ‘পাশে নতুন শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে তাই পুরোনো শহীদ মিনার ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।’
পরবর্তীতে স্কুলের নাম দিয়ে অনুসন্ধান করে গত ১৭ জানুয়ারিতে ‘এমডি মিন্টু বিশ্বাস’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ওই বিদ্যালয়ে ধারণকৃত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওতে ভেঙে ফেলা শহীদ মিনারের পাশেই নতুন ও আগেরটির চেয়ে বড় আরেকটি শহীদ মিনার দেখা যায়।
ভিডিওতে প্রদর্শিত বিদ্যালয়ের একটি বিল্ডিংয়ে বিদ্যালয়টির নাম দেখা যায়, ‘টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়।’
ওই ভিডিওর ক্যাপশনেও বিদ্যালয়টির নাম বলা হয়, “#টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় সদর ঝিনাইদহ।’ অর্থাৎ, উক্ত বিদ্যালয়টিতে দুইটি শহীদ মিনার ছিল যার মধ্যে ছোটটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
ছবি: এ বছর ওই বিদ্যালয়ের নতুন শহীদ মিনারের সামনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের দৃশ্য
এছাড়াও এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘এমডি জামশেদ আলী’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮ টা ৪৪ মিনিটে করা পোস্টে এ বছর ওই বিদ্যালয়ের নতুন শহীদ মিনারের সামনে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের একাধিক চিত্র দেখা যায়।
উল্লেখ্য যে, কিছু পোস্ট ও কমেন্টে আলোচিত শহীদ মিনারটি একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে ভাঙা হয়েছে দাবি করা হলেও ওই বিদ্যালয়ের নতুন শহীদ মিনারের সামনে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের চিত্রে নতুন শহীদ মিনারের পাশে পুরোনো শহীদ মিনারটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পুরোনো শহীদ মিনারটি গতকাল ২১শে ফেব্রুয়ারির আগেই ভাঙা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে আলোচিত টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নওশের আলীর সাথে। তিনি জানান, শহীদ মিনার ভাঙার ঘটনাটি মাসখানেক আগের। ২০২৩ সালে নতুন করে বড় একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় সমস্যা হতো পুরোনো ছোট শহীদ মিনারটির কারণে। তাই ছোট পুরোনো শহীদ মিনারটি সরিয়ে ফেলতে শিক্ষার্থীরা আবেদন করলে তিনি শহীদ মিনারটি সরিয়ে ফেলার অনুমতি দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, শহীদ মিনার একটি হলেই হয়, দুইটি শহীদ মিনারের তো দরকার নেই। পুরোনো শহীদ মিনারটিও আমার (বর্তমান প্রধান শিক্ষকের) হাতেই তৈরি ১৯৮৮ সালে। তখন আমি এই স্কুলের পরীক্ষার্থী ছিলাম।
সুতরাং, নতুন করে বড় একটি শহীদ মিনার ইতিমধ্যে তৈরি হওয়ায়, পুরোনো ছোট শহীদ মিনারটি প্রধান শিক্ষকের অনুমতি সাপেক্ষে ভেঙে ফেলার ঘটনাকে বিদ্বেষমূলক সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin
কমেন্ট বক্স